একদিন খুব বাতাস বইছে। ঠান্ডা, শিরশিরে। তখন রাত হয়ে গেছে অনেকখানি। কাগজ, পেনসিল নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে আছি। আমি জানি না কী আমাকে আঁকতে হবে। প্রসঙ্গত বলি : লিখতে আসার বহু আগে থেকে আমি রঙ-তুলি সারা ঘরে ছড়িয়ে কীসব আঁকতে চেষ্টা করতাম। সেদিনই প্রথম থমকে গেলাম। দীর্ঘক্ষণ এই নৈঃশব্দকে সহ্য করে একটা সময় হঠাৎ অনুভব করলাম আমার ভেতর একটা অন্য মানুষ ঢুকে পড়েছে। সে যেন কী সব বলতে চায় আমাকে। আমি কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি জলের বোতলটা হাতে তুলে নিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল কিছুটা জল তাকে শান্ত করতে পারে। ক্রমে সে আরও ক্ষিপ্র হয়ে উঠছে। নেশা লাগছে যেন। এক আশ্চর্য ঘোর। এরই মধ্যে কখন যে পেনসিল ছেড়ে হাতে পেনটা তুলে নিয়েছিলাম তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না। সম্ভবত সেই নেশাই আমাকে কোনো এক পথে চালিত করেছিল। কিন্তু কী সেই পথ? আজও সঠিক বুঝতে পারিনি। এখন মনে হয় এক একটি জন্ম খুব ছোট পরিসর এসব অজানা পথ চিনে নেওয়ার। শুধু কি অজানা? নিদারুণ গহীন। ঘন। দুর্গম। সেই মানুষটা সেদিন আমাকে খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। আমার ভেতর একটা অন্য মানুষ! একটা অন্য জগৎ? যে জগতের কথা অনেক পরে আমার কবিতায় ফিরে এসেছে। ধরতে চেয়েছি সে জগতের চিত্রকল্প চেনা শব্দের খসড়ায়। কিন্তু সত্যিই কি সে জগৎ এমনই একটা প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার মতো সহজ ও সোজা!
“আমরা যে পথে হাঁটি সেই সমস্ত রাস্তাই সহজ এবং সোজা।অর্থাৎ ও জীবনে কোনও বাঁক নেই। বাঁকের কিনারে ভেঙে পড়া নেই। আমাদের ও বাড়িতে প্রতিটি ইটের ফাঁকে কবিতার গাঁথনি…”
(যে ঘর ভেজা ছিল কবিতা ধোয়া জলে / যদি দু’টুকরো জেরুজালেম ছুড়ে দাও ঝুলবারান্দা থেকেই)
যে জগতের প্রতিটি বাঁক সহজ এবং সোজা সে জগতেরই প্রতিটি রাস্তা আবার অসম্ভব মৃত্যু অভিমুখী। কখনো তীব্র অন্ধকার। কখনো পথ ঘন কুয়াশায় ঢাকা। সে শহর কখনো আলোর রোশনায় মাতাল হয়ে ওঠে, কখনো আবার সে শহরই ডুবে যায় গূঢ় শোকপ্রস্তাবে। অর্থাৎ এক অসম্ভবের সামনে নীচু মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোনও গন্তব্য জানা নেই আমার। এক ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দার মতো অসহায় ও নিরুপায় এ যাপন, যেখানে শুধু লিখে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। তবে কি এ কোনও নির্বাসন? কোনও রুদ্ধ কারাগার? হয়তো তাই অথবা নয়। এই নতুন জন্ম এখনো তার সমস্ত রহস্য নিয়ে আমাদের ভূত ভবিষ্যৎ বর্তমানের গায়ে উল্কিপুরাণ রচনা করছে। এর কোনও শেষ নেই। আদি-মধ্য-অন্ত নেই। এ এক ভেসে থাকা পরম সত্য। যাকে শুধু ছায়ার মতো অনুভব করেছি, ছুঁতে পারিনি কখনো।
“সাইকেডেলিক আলোয় পাহাড়ের গায়ের গন্ধ, রডোডেনড্রন আর অর্কিড সাজিয়ে আমরা এই সভ্যতা গড়ে তুলেছিযাতে শুধু স্নিগ্ধ এক ছায়া দু’হাতে অতীত নিয়ে নির্বাক দেখে গেছে এই নতুন জন্ম…”
(সান্ধ্য স্থাপত্য / যদি দু’টুকরো জেরুজালেম ছুড়ে দাও ঝুলবারান্দা থেকেই)

এই শহর জুড়ে নিঃসঙ্গ ভ্রমণ আমার। আর তখনই দেখা হয়ে যাবে, যাবেই সেই মানুষটার সাথে যে আমার মধ্যে কোনো এক রাতে ঢুকে পড়েছিল। তার এই শহরের মতোই অনিশ্চিত গতিবিধি। কখনো সে ভীষণ প্রেমিক। তাকে যেন কোনো বাধাই দমিয়ে দিতে পারে না। নিজস্ব তেজে জাহির করে তার প্রেমানুবাদ।
“অন্ধকারের গ্রীবায় লেগে থাকা কয়েক ফোঁটা বিষাদ এবং মৃত্যুকে তুচ্ছ করে আমি লিখলাম প্রেমের কবিতা সারারাত একের পর এক…মোম শেষ হয়ে এলেও আরও একবার…”
(পুনর্জন্ম / যদি দু’টুকরো জেরুজালেম ছুড়ে দাও ঝুলবারান্দা থেকেই)
কখনো তার ক্রোধে সমগ্র অন্তরীক্ষ জুড়ে জেগে ওঠে বুলেট চিহ্ন। সেইসব মুহুর্তে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কোনও কথা বলার ক্ষমতা আমি আজও জড়ো করতে পারিনি। কী এক ভীষণ প্রতাপে আমাকে যেন বশ করে ফেলে সে। আমার সমস্ত সুতোর শেষ প্রান্তটি যে তার আঙুলে বাঁধা তা ততক্ষণে আমার বুঝে নিতে বাকি থাকে না। কখনো আবার এই অসম্ভব তেজী মানুষটিই নিজের কাছে নিজে ভেঙে পড়ে। শোক তাকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। আমি তার ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া টুকরোগুলি জড়ো করে জোড়া লাগাতে বসি। সম্ভবত সে কারণেই তার গায়ে অজস্র সেলাই, ফুটে ওঠা বিষ। ঠিক পরমুহূর্তেই সে হতাশাগ্রস্ত অথবা বিবাগী। আবার সে তেজী, অসম্ভব প্রেমিক। সে কখনো আত্মসমর্পণ করে মহাশূন্যের কাছে, অসম্ভবের কাছে, কখনো আবার তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ঈশ্বরকে রাস্তার ভিখিরি বানিয়ে দেয়। এমনই এক অসম্ভব অথচ সত্য তার অবস্থান। সে জেগে উঠলে আমি আজও শিউরে উঠি। সম্ভবত সারাজীবন এই শিউরে ওঠা আর পিছু ছাড়বে না কোনোদিন। এ আমার একমাত্র ভবিতব্য। অন্তত এই মানুষটি যতদিন আমাকে এই বন্দিজীবন থেকে মুক্তি না দিচ্ছে। তার বুটের শব্দে এক একটা রাত ঘুমোতে পারিনি বারবার মনে হয়েছে সে ঘরময় টহল দিচ্ছে। যেন আমিই তার প্রিয় উপনিবেশ। সে জাঁকিয়ে শাসন করছে আমায়। এতদিনেও এই মানুষটির সামান্যতম ইচ্ছে অনুধাবন করতে পারিনি। প্রতিদিন সে বদলে যাচ্ছে। হয়তো মাসের পর মাস ঘুমিয়ে সে যখন জেগে উঠছে তখন সে ভিন্ন এক মানুষ। তার এই জেগে ওঠা, তার আজীবন নৈঃশব্দ্য আমাকে শাসন করে চলেছে। তার ভিতরের স্পৃহা ও প্রজ্জ্বলনগুলি আমি অনুবাদ করে চলেছিমাত্র।
“সেখানে ভারী অরণ্য। এত উঁচু থেকে অরণ্যর কটিদেশে তাকালে জীবনকে খুব ক্ষুদ্র মনে হয় মনে হয় এ অনন্তর সামনে খুব সামান্য এক বিন্দু মতো আমার এ ভ্রমণ ঠিক যেমন তোমার হাতের তালুতে আমার এক ফোঁটা অশ্রু নিরুপায় শবযাত্রীর মতো আজও লেগে আছে “
(হৃদয় ভাঙা সমস্ত ঢেউ)
আমি তার নিরুপায় কৃতদাস ছাড়া কিছুমাত্র নই এ সত্য আজ আর আমার অজানা নয়৷ তার নৈঃশব্দ্যের একমাত্র অনুবাদক আমি কারণ আজ পর্যন্ত সে মুখ খোলেনি, শুধুই শাসন করে গেছে। তবু এ কথা প্রতিদিন আরও জাঁকিয়ে বসছে আমার ভিতর —-
“আমি কি তার সমস্ত বিষাদতার অন্দর, তার বাহির লিখে ফেলতে পারি!”
(এপিটাফ)
হয়তো সে কারণেই এখনো রোজ ভয় পাই সেই মানুষটির মুখোমুখি হতে, ভয় পাই কখন সে হঠাৎ জেগে উঠবে। সে জেগে উঠলে কোনো বাসস্টপ, কোনো পাহাড়তলি, কোনো উপত্যকা আর আমার থাকে না, সে তার অধিকার বুঝে নেয়। মৌন কৃতদাসের মতো সে আদেশ পালন ছাড়া আর কোনও উপায় নেই আমার। তার ঘুম অথবা নির্ঘুম পদচারণ ছায়ার মতো আমার সাথে প্রতিদিন ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু যে সময়টুকু সে ঘুমিয়ে আছে সেটুকু সময় আমার নিজস্ব ঘরবাড়ি, পদ্মাপাড়, খেলার মাঠ, প্রেমিকা, স্পর্শ ইত্যাদির। হঠাৎ সে জেগে গেলে তার কথায় সব ছেড়ে চলে আসতে হবে আমাকে, হবেই কারণ সে সমস্ত ছায়ার বুক চিরে দেখাবে কত স্বর স্তব্ধ পড়ে আছে—
” আমার পিছু নিতে নিতে সেদিন একটি নির্জন রাস্তার মোড়ে ও(রা) দু’হাত দিয়ে বুক চিরে দেখাল প্রতিটি ছায়ার উল্টো পিঠে কত স্বর স্তব্ধ পড়ে আছে… “
(স্বর)
এ যেন রোজ আমার প্রভুর প্রতি আমার কর্তব্য হয়ে উঠছে। নাহলে যে সে উন্মাদ হয়ে যাবে তখন তাকে ধরে রাখার ক্ষমতা নেই কারও। আমি প্রতিদিন আরও জড়িয়ে যাচ্ছি এই নৈঃশব্দ্যের অনুবাদে, এই দাসত্বে। শুধু আমি জানি না কখন তার সমন এসে পৌঁছাবে, কখন আমাকে সব ছেড়ে ছুটে যেতে হবে, এ যেন এক অনন্ত অপেক্ষা, এক অসম্ভবের আশায় পথ চেয়ে বসে থাকা, যেন নিভৃত শ্মশানের ডোম শবদেহের অপেক্ষায় শীতের রাতেও একা জেগে আছে —- এই আমার খুব অসহায়তা…
…………………………………………………………………………………….
আবহমান-এ প্রকাশিত
essay writing cheap my assignment help us student research proposal
best article
We are actually will swiftly and also successfully generate a warranty Premium renovation New York. Hatty Llywellyn Thynne
Hi my friend! I want to say that this post is amazing, great written and include almost all vital infos. I would like to peer extra posts like this. Dyanna Gardner Marcel
You have a quality site, I congratulate you on this
global pharmacy canada best drugstore lipstick drugstore makeup
erectile dysfunction causes drugs from canada pharmacy orlando
erectile dysfunction medications pharmacy online canadian drug pharmacy
usa pharmacy pharmacies near me mail order pharmacy
online drugstore pharmacy http://pharmacy-onlineasxs.com/ erectile dysfunction pills
drugstore beetle rx plus pharmacy cvs drugstore
canadian online pharmacies best canadian online pharmacy medical pharmacy